মনে হচ্ছে আমি হাওয়ায় ভেসে বেড়াচ্ছি। নিজেকে দেখতে পাচ্ছি। কিন্তু কানে কোন শব্দ আসছে না। কানে একটা শোঁ শোঁ শব্দ,ব্যাস ঐটাই। আমি নিজে দেখছি,চোখ বন্ধ কিন্তু মুখ খোলা অথচ আমি মুখ খুলে ঘুমাই না। আমার মনে পড়ে রাতে আমি খুব পান করেছি,গলা পর্যন্ত, বমিও করেছি কয়েকবার এবং সম্ভবত এরপরেই জ্ঞান হারিয়েছি অথবা মদ্যপ অবস্থায় ঘুমিয়ে পড়েছি। তাহলে আমি নিজেকে দেখছি কেন? আমার মনে পড়ে সেই ডুমুরখেকো মানুষটার কথা, এটা কি প্রাসঙ্গিক কিনা তাও জানিনা। আমি নিজেকে ছুঁয়ে দেখি,বোধ পাইনা। তার মানে আমি কিছু স্পর্শ করতে পারছিনা। আবারো চেষ্টা করি, পারিনা। তবে কি আমি মৃত। বুঝতে পারি আমার দুই হাত ঘামছে,মৃতের কি দুই হাত ঘামে? আমি তো ম্যাটারিয়ালিস্ট ছিলাম,জানতাম মৃত্যুর পর বোধ থাকবেনা। তবে?
আমি জানলা দিয়ে তাকাই, এখন দুপুর, তাহলে এতক্ষণ কি আমি জ্যান্ত ছিলাম, ছাই দেয়া শোল মাছ? প্রাণ বেরোচ্ছিল না? দুই পা ফেলেই আমি বুঝতে পারলাম পা মাটিতে পড়ছে না, ভাসছি। আমি একটু মজা করতে চাইলাম, ব্যালকনিতে গিয়ে লাফ দিলাম। নাহ,ঠিকই আছে,আমি নাই এই দুনিয়ায়। কিন্তু কয়েকটা কাজ তো বাকি !
আমার আজকের দিনের প্রথম কাজ ছিল মাকে টাকা পাঠানো। মায়ের হাতের টাকা শেষ,রাতেই তো কথা হল। এখন? এটা একটা বড় বিপদে পড়লাম। দুই নম্বর কাজ ছিল একটা গল্প লেখা লেখা,পরশুদিনের সাহিত্য পাতায় যাবে যেটা। জনৈক কবি আমাকে একটা গল্পের থিম দিয়েছিল। আচ্ছা আমি কি গল্পটা শেষ করেছিলাম রাতে? রিডিং রুমে দৌড়ে গেলাম, নাহ পৌনে তিন পেইজ লেখার পর সেখানে আরো কিছু লেখা হয়েছিল কিন্তু আমি কেঁটে দিয়েছি। আমার সেটা নিয়ে মাথা ব্যাথাও নেই। যদিও আমি চাচ্ছি লেখাটা পরশু প্রকাশ পাক। অবশ্যই এভাবে-উঁনার শেষ লেখা …।
মোবাইল ফোন বেঁজেই চলছে,সাইলেন্ট করা না,আমিই কানে শুনছিনা। নাম পড়লাম-বিসন্ন বিকেল। ফেইসবুকের মাধ্যমে পরিচয়,আসল নাম আজো জানা যায়নি। আমি দেখা করতে চেয়েছিলাম,আমাকে চরিত্রহীন বলে গালি দিয়েছে,কারণ অজানা। ও আমাকে একবার অদ্ভুত একটা গল্প শুনিয়েছিল,একটা বিড়ালের গল্প। একদিন বিড়ালের খুব খিদে পায়,তখন খাঁচার মুনিয়াটা সে খেয়ে ফেলে,মুনিয়াটা ছিল রাজকুমারী,রাজা তাকে প্রাণে বাঁচানোর জন্য এভাবে লুকিয়েছে। গল্প বলে সে একটা দীর্ঘ্শ্বাস ছাড়ল,আমাকে বলল তার নাকি মন খারাপ। আমি কবিতা শোনালাম- বাহুকে প্রকাশ করে
ওষ্ঠ দিয়ো চুমি
কন্ঠ বাষ্প করে
ভালবাস তুমি।
আমাকে বলে –কী ছাঁইপাশ শোনান,আমি চুপ মারি।
আমি ব্যালকনিতে বসে সিগারেট ফুঁকতাম। চারদিকে ফিল্টার আর ছাঁই। আমার ধূম্রপান করতে ইচ্ছে করে,আমি পারিনা। মনে পড়ে টিফিনের টাকা জমিয়ে কলেজে সিগারেট কিনতাম,সেটা আবার তিনজনে মিলে টানতাম। উলটা দিকের হোটেল থেকে সিঙ্গারা ভাজার গন্ধ আসে, এ কেমন বোধ কানে শোঁ শোঁ শব্দ আর নাকে ভাজা গন্ধ। মোবাইলে ফোন আসে কিনা দেখতে আবার রিডিং রুমে যাই,বেঁজেই চলছে,তিনটা টেক্সট,১১টা মিসকল এবং যোগ হচ্ছে। যাক আমাকে কেউ খুব করে চাচ্ছে কিন্তু আমি ধরা দিচ্ছিনা। নিজেকে গুরুত্বপূর্ণ মনে হলেও আসলে অসহায় লাগছে,আমি চাই ফোনটা রিসিভ করতে।
আমার বাসায় বিরাট জটলা, পুলিশ , পাশে আমার বন্ধু বান্ধব,কেউ দেয়াল ধরে কাঁদছে,কেউবা হতভম্ব। খুশি যারা হবে তারা কেউ এখনও পৌঁছায়নি। একটা মেয়েকে দেখা যাচ্ছে,রিডিং রুমে আমার মোবাইল ছুঁয়ে দেখছে,টেক্সট গুলো ফরোয়ার্ড করছে বিসন্ন বিকেলকে। আমি দেখি মায়াময় মেয়েটিকে,কপাল ছুঁয়ে দেই,হাত ধরি,কিন্তু ও বুঝেনা। আমি শবের সাথে সাথে চলি,এ জীবনটাও পরাধীন।